পাহা‌ড়িদের প্র‌তিভার পাশে কি কেউ নেই..!

Post Image

 


বেশ কয়েক দিন ধরে মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৬ টিমের ফুটবল খেলা দেখছি, জয়ও হয়েছে কিন্তু ১১ জনের মধ্যেই যার অবদান বেশি ছিলো তাদের নাম গন্ধ খুব কমই চোখে পড়েছে। তাদের নাম পাবলিক প্লেসে কেউ দিতে চায় না, প্রচার করতে চায় না কারণ তাঁরা যে আদিবাসী/সরকারী ভাষায় নৃ-গোষ্ঠি। হ‌বেই বা কি ক‌রে; কারণ পরাজ‌য়ের ভয়! কিন্তু ১৬ কো‌টি মানুষের সম্মান রক্ষা ক‌রার সময় সে অন্ধকা‌রের প‌ড়ে থাকা সে অজগায়ে মেয়েরা তো কোন দিন এ অনুভূতি করেনি।

‌দেখুন ১৬ কো‌টি মানুষ, প্রাণভ‌রে দেখুন; আমা‌দের পাহাড়েই ঘু‌মিয়ে রয়েছে কত প্র‌তিভাবান সা‌কিব, তা‌মিম, মুস্তা‌ফিজ ও আসলামের মত খেলোয়াড়। সাহস থাকলে  আমা‌দের পাহাড়ী ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের এক‌টিবার সু‌যোগ দিয়ে দেখতে পারেন। তাঁরা প্রমাণ ক‌রে ছাড়‌বে পাহাড়ী ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের কত মেধা ও প্র‌তিভা রয়েছে।

জা‌নি এদের সু‌যোগ দিবেন না। বরচং সুযোগের বিপরী‌তে তাঁ‌দের উপর কত না অত্যাচার, নির্যাতন, ভূ‌মি বেদখল, জুলুম, ধর্ষণ করে যাচ্ছেন। যার জন্য তাঁ‌দের‌ কে ভ‌য়ে ভ‌য়ে থাক‌তে হয় আর চল‌াফেরা করতে হয়। স্কুল, ক‌লেজ, ইউ‌নিভার্সি‌টি সবখা‌নেই বৈষম্যের শিকার হ‌তে হয়। এদের অশ্রু ভেজা চো‌খের দি‌কে তাকা‌নো মত মানুষ মনে হয় এ‌দে‌শে কেউ নেই।

যার প্রমাণ- অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলের খেলোয়ার চাথুইমা মারমা এখন আর মাঠে দৌড়ায় না। লাথি মারে না আর ফুটবলে। কেন চাথুইমা মাঠে দৌড়ছে না আর ফুটবলে লাথি মারছে না? তাহলে একটু মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে- গত বছরের শুরু দিকে জাতীয় দলের অনুশীলনের সময় তার বাম পায়ের 'লিগামেন্ট' ছিঁড়ে যায়। এরপর খেলা থেকেই ছিটকে পরে চাথুইমা। বাদও পড়েছে জাতীয় টিম থেকেও। অথচ আজ পর্যন্ত ফুটবল ফেডারেশন এ প্রতিভাবান কিশোরীর পাশে এসে দাঁড়ায়নি।

আজ কেন চাথুইমা অনূর্ধ্ব-১৪ টিমের খেলতে পারলো না, তাঁরও তো কথা ছিলো এ টিমে খেলার!যখন লাল সবুজের জার্সি পরে মাঠে খেলেছিলো, যখন তাঁর পারফরমেন্স ভাল ছিলো তখন খুবই দরকার ছিলো বাফুফে। আজ সে ইনজুরি তাই বলে প্রয়োজনবোধ মনে করছে না। মনে করছে না তাকে চিকিৎসা করিয়ে আবার দলে ফিরে নিয়ে যায়। কেন বা নেবে তাকে নিলে যে স্বীকৃত মানুষদের কথা কেও বলবে না।

বাপ দাদা‌দের কাছ থেকে শু‌নে‌ছি যে, পাহা‌ড়ে আগে বাঘ, ভাল্লুক, হা‌তি ও কত হিংস্র বন্য প্রাণী বিচরণ করত; সন্ধ্যা হ‌লেই না‌কি বাড়ী থে‌কে বের হ‌তে পারত না কেউ এবং লোকালয় ছে‌ড়ে একা একা দূ‌রে কোথাও যাওয়া যেত না। ‌কিন্তু এখন সেই সমস্ত হিংস্র বন্য প্রাণী আর নেই, তাই এদের আক্রম‌ণের ভয়ও নেই।

পাহা‌ড়ে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের ম‌নে প্র‌তি‌নিয়ত ভয় নামক শব্দটি বিচরণ করার কারণ হল- কখন যে কেউ বাড়ী‌তে আগুন লা‌গি‌য়ে দেয়, কখন যেন কেউ এসে একমাত্র সম্বল ভূ‌মি‌টি বেদখল ক‌রে নেয়, কখন যেন এসে আমাদের মা-বোন কে ধর্ষণ ক‌রে আর অতপর ধারা‌লো দা দি‌য়ে গলা কে‌টে হত্যা ক‌রে।

অন্যদিকে দা‌রিদ্র অভিশাপ কোন ভাবে ছাড়ছে না। কিভাবে বা মেধা বিকাশ করবে?  সকা‌লে ঘুম থেকে উ‌ঠে যে মেধা বিকা‌শের প‌রিব‌র্তে তা‌দের‌কে অস্থিত্ব টি‌কি‌য়ে রাখা নি‌য়ে চিন্তা কর‌তে হচ্ছে। বিলুপ্ত প্রান্তীক জন‌গো‌ষ্টি‌কে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হতে যে ব‌ঞ্চিত ক‌রে রাখা হ‌য়ে‌ছে।

এত বাঁধা-বিপ‌ত্তি, দা‌রিদ্রতা, অত্যাচার, নির্যাতন- নিপীড়ণ, পরেও এসব প্র‌তিকূলতা অতিক্রম করে পাহা‌ড়ে ছে‌লে‌-মে‌য়েরা যে এ‌কের পর এক দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কত সম্মান জয় ক‌রে আনছে যা বলার ভাষা রাখছে না।